বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৩ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বায়তুশ শরফ সংলগ্ন একরের বেশি পাহাড় কেটে সাবাড় করার ভয়াবহ ঘটনা জানতো না বনবিভাগ। অথচ পাহাড় কাটার স্থানের আধা কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত বনবিভাগের বিট কার্যালয়টি। আর এই ভয়াবহ পাহাড় কাটার ভয়াবহ দৃশ্যটি দেখা মিলেছে শনিবার ভোরে পাহাড় কাটতে গিয়ে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর। বনবিভাগ বলছে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ৭ টি মামলার পরও এই পাহাড় কর্তন করেছে হেলাল ও সরওয়ার নামের ২ যুবক।
উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন জানিয়েছেন, শনিবার ভোরে জালিয়াপালং ইউনিয়নের বায়তুশ শরফ সংলগ্ন কাসিম মাকেটের দক্ষিণ পাশের পাহাড় কাটতে গিয়ে মুসলেম উদ্দিন (২০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে।
নিহত মুসলেম উদ্দিন উখিয়ার পাইন্যাশিয়া চাককাটা এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে।
ওসি জানান, ভোর সাড়ে ৫ টায় মুসলেম উদ্দিন স্থানীয় হেলাল কোম্পানীর ডাম্পার ট্রাকে পাহাড়ের মাটি কাটতে গেলে হঠাৎ করে বড় একটি মাটির চাক ও গাছের ধারালো শিকড় এসে যুবকের অন্ডকোষের ঢুকে যায়। এতে অন্যান্য শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনার পর উখিয়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) মো. সালে আহমদ, বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল আমিন সহ পুলিশ ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যান।
যেখানে গিয়ে দেখা মিলেছে ভয়াবহ পাহাড় কাটার দৃশ্য। এক একরের বেশি পাহাড় কেটে ইতিমধ্যে সমতল ভ‚মিতে পরিনত করেছে চক্রটি। যেখানে পাহাড় কাটার মাটিও নেই। যা ডাম্পার করে বিক্রি করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানান বনবিভাগের ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল আমিন।
তিনি জানান, ওই এলাকার মৃত কাসেমের ছেলে হেলাল উদ্দিন ও সরওয়ার নামের অপর এক যুবকের নেতৃত্বে গত এক মাসে এই পাহাড় কাটা হয়েছে। বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। এই দুই জনের বিরুদ্ধে আগে বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় কাটার দায়ে ৭ টি মামলা করেছিল। যা আদালতে বিচারাধিন রয়েছে। এছাড়া কয়েক মাস আগে পাহাড়ের মাটি সহ হেলালের ডাম্পারও জব্দ করেছিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
ফিরোজ আল আমিন জানান, এব্যাপারে আবারও মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।
সার্বিক বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ। তিনি জানান, পাহাড় কাটার যে চিত্র দেখা গেছে তা ভয়াবহ। ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটার এলাকায় বনবিভাগের বিট কার্যালয়। অথচ বনবিভাগ বিষয়টি জানেন না, এটা খুব অসচেতন একটি কথা। বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর শুধুমাত্র মামলা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা করছেন। ফলে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনের অভিযানের পর জব্দ করা এস্কেভেটর লুট, সীলগালা ভেঙে আবারও পাহাড় কাটার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে পাহাড় রক্ষায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দ্রæত শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply